মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং সেভাবে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।
নিজেকে ব্র্যান্ড বানান, সময় কিন্তু সীমিত...!!!!
দেশের ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৯৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়,
৩টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় থেক প্রতিবছর বের হচ্ছে দুই লাখের বেশি আর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে বের হচ্ছে প্রতিবছর ৫ লাখেরও বেশি।
৩টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় থেক প্রতিবছর বের হচ্ছে দুই লাখের বেশি আর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে বের হচ্ছে প্রতিবছর ৫ লাখেরও বেশি।
৭ লাখ শিক্ষিতদের একটাই কথা – I want a job!
শিক্ষাজীবন শেষে কর্মজীবন শুরু তো করতেই হবে, খুব স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে। একদিকে প্রচুর বেকার আর অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ বিদেশি চাকুরির বাজার দখল করে নিচ্ছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ফিলিপাইনের চোখ এখন বাংলাদেশের কর্মবাজারের দিকে। শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের সংখ্যায় বাংলাদেশ তৃতীয়।
পরিস্থিতি খুব পরিষ্কার। দেশের চাকুরি ৪%-৫% সরকারি চাকুরি বাকি ৯৪%-৯৫% চাকুরি এখন বেসরকারি খাতে। আরও পরিষ্কার যে, চাকুরির অভাব নেই।
চাকুরির অভাব নেই অথচ চাকুরি পাচ্ছে না লাখ লাখ বাংলাদেশি তরুণ-তরুণী। ওদিকে লাখ লাখ বিদেশি বছরে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে যা বাংলাদেশের সব সরকারী চাকুরিজীবীদের মোট বেতনের চাইতেও অনেক বেশি।
তাহলে গ্যাপটা কোথায়? বছরে ৭ লাখ শিক্ষিত ছেলেমেয়েতো বের হচ্ছে! এরা কেন চাকুরি পাচ্ছে না, বিদেশির দখল করা লোভনীয় চাকুরিগুলো?
University Grants Commission (UGC) কতগুলো কারণ বলেছে – তারমধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা বের হচ্ছে তাদের
১। কমিউনিকেশন স্কিলস কম,
২। ইংরেজি বলতে পারার ছেলেমেয়ে খুবই কম,
৩। যা জানে, তা উপস্থাপন করতে পারে না এবং ব্যবসায়ীক ডিলিংসের যেসব উপস্থাপনা, সেগুলোতেও ভীষণ দুর্বল।
২। ইংরেজি বলতে পারার ছেলেমেয়ে খুবই কম,
৩। যা জানে, তা উপস্থাপন করতে পারে না এবং ব্যবসায়ীক ডিলিংসের যেসব উপস্থাপনা, সেগুলোতেও ভীষণ দুর্বল।
সম্ভবত ৩টি কারণই দারুণ সত্যি। কমিউনিকেশন স্কিলসের কথা বললে – বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা অনেক ছেলেমেয়েই আকাশ থেকে পড়ে! এটা কী? খায় না গায়ে দেয়?
আরেকটি কারণ এর সাথে যোগ করা দরকার, প্রতিবছর যারা বের হচ্ছে, তাদের প্রায় সবাই সরকারি চাকুরির জন্য সেই মান্ধাতার আমলের ইথিওপিয়ার রাজধানী, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি এসব মুখস্থ করা শুরু করে দেয় আর অষ্টম শ্রেণির অংক বই হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ করা ছেলেমেয়ের সবচেয়ে জরুরি বই!!
সরকারি চাকুরিগুলো তেমনই – Knowledge based, প্রথমেই এখানে স্কিলস দরকার নেই। যারা চাকুরি পাবে তাদেরকে পরে তৈরি করে নেয়া হবে। এবং প্রশিক্ষণখাতে তাদের জন্য বিপুল বাজেট থাকে।
কিন্তু বেসরকারি চাকুরি বা কর্পোরেট জব?
সেখানেতো ইথিওপিয়ার রাজধানীর কোন ধার ধারছে না। সেখানে সরাসরি Skilled মানুষ চায়। সরকারের মতো তাদের বিপুল বাজেট নেই, যে নিয়োগ দেয়ার পরে প্রায় ৩০ বছর তাদের ধাপে ধাপে তৈরি করা হবে! ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অসুখটা ঠিক এখানেই।
সরকারি চাকুরি প্রস্তুতি নিতে গিয়ে ৯৫% ছেলেমেয়ে হতাশ হয়ে পরে। এবং তারা যেহেতু ৬/৭ বছরও সেই মুখস্থ করেই সরকারি চাকুরি পাওয়ার জন্য দৌড়াতে থাকে, স্কিল অর্জনের সময়ই তো নেই। এরা পরবর্তীততে ঘোর বিপদে পড়ে।
প্রথম দিকে যারা কর্পোরেটে ঢুকে গেছে, তাদের ধারে কাছে তাদের আর যাওয়ার সময় বা সুযোগটাও থাকে না।
এই বিপুল সংখ্যাটা, বলতে কষ্ট হয়, জব মার্কেটের জন্য অনেকটা অচল মালে পরিণত হয়।
আর ঘটনা ঠিক সেখানেই ঘটে । আমাদের ব্যবসায়ী, কর্পোরেটরা এই অচল মাল নিতে একদমই রাজি না। তারা চায় রেডিমেড চৌকস পেশাজীবী। টাকার যেহেতু অভাব নেই, তারা বিদেশ থেকে প্রচুর চৌকস কর্মী নিয়ে আসে। কারণ অচল মাল দিয়ে তারা প্রতিযোগিতার বাজার টিকতে পারবে না। অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে তাদের আসলেই হাত পা বাঁধা।
প্রথম সর্বনাশটা ঘটে যায়, সরকারি চাকুরির পেছনে দৌড়াতে গিয়ে, দ্বিতীয় সর্বনাশটা ঘটে, কোন ধরনের স্কিল অর্জনের চেষ্টা না করে, চ্যালেঞ্জ নেয়ার সাহসটা না নিয়ে নিজেকে প্রতিযোগিতার মাঠে খেলার জন্য অনুপযুক্ত প্রমাণ করে দিয়ে।
তাহলে ক্যারিয়ারের প্রথম অসুখটি কী বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের?
প্রথম অসুখটি হলো ক্যারিয়ার নিয়ে কোন স্বপ্ন না থাকা, সুনির্দিষ্ট ক্যারিয়ার না থাকা। যে ৫% তাদের স্বপ্ন ঠিক করে প্রস্তুতি নিয়ে এগুতে থাকে, তারা জব মার্কেট ফাটিয়ে দেয়, চাকুরি তাদের পেছনে দৌড়ায়।
আর যে ৯৫% বলে – I want a job, I want any kind of job! তাদের ভীষণ অসুখ। কী জব সেটাই জানে না, মানে জীবনে সে কী চায়, সেটাই তো জানে না। যে তার জীবনে কী চায় সেটাই জানে না, সে আসলে তার প্রতিষ্ঠান তার কাছ থেকে কী চায়, জব মার্কেট কী চায়, সেটা বুঝবে কীভাবে!!
এদেশের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে মাস্টার্স পাশ করার পরে ভাবে, সে কী করবে! তখন সে ১০১ ধরনের চাকুরিতে আবেদন করতে থাকে। যেই সার্কুলারই পায়, আবেদন করতে থাকে।
অথচ অনার্সে থাকতে থাকতেই তার ক্যারিয়ারের ‘সুনির্দিষ্ট’ প্রস্তুতি নেয়ার কথা ছিলো। ৫% তাই করে, তারা নিজেদের লক্ষ্য ঠিক করে পড়ার সাথে সাথে ক্যারিয়ারের দৌড়টাও শুরু করে।
বাকিরা?
এই দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে। আর একবার পিছিয়ে পড়লে, যারা আগে দৌড় শুরু করেছে, তাদের ধারে কাছে যায় না।
এই যে নিজের ক্যারিয়ারের কোন চয়েস নাই! একটা সময়ে গ্রামে মেয়েদের কোন চয়েস থাকতো না। বাবা মা যেখানেই বিয়ে দিতো, সেখানেই কবুল বলতো।
কিন্তু চাকুরির বেলায়?
কোন চয়েসই নাই, বিশাল অংশের, ওই আগেরদিনের বিয়ের মতো – একটা হইলেও হইলো। সে জানেই না, তার কী করা উচিত। সে জানেই না, নিজের সাথে যায় এমন ক্যারিয়ারের জন্য তৈরি না হয়ে অন্য ক্যারিয়ারে বেতন যাই হোক, তা নরকে পরিণত হয়।
এই অসুখের চিকিৎসা একটাই – নিজের ক্যারিয়ার চয়েস থাকতেই হবে। ১০১টা জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করে শক্তির অপচয় না করে পুরো শক্তি নিয়ে একটা লক্ষ্যের দিকে ছুটতে হবে।
একটা পাইলাম আর ঢুকে পড়লাম – এর নাম ক্যারিয়ার নয়, এর নাম জীবন নয়। একটু আগে থেকে প্রস্তুতি আর সেই অনুযায়ী পরিশ্রম করলে ক্যারিয়ারের অসুখ ধারেকাছেও আসবে না। চাকুরির কোন অভাব নেই, যদি কমিউনিশন স্কিলস থাকে, ইংরেজিটা ভালো বলতে পারে, প্রেজেন্টেশন সেই রকম দিতে পারে, আর যে কাজ সেটাতে ভালোবাসা থাকে মানে সেই কাজটি করার সব দক্ষতা থাকে। ৫% এর আছে, বাকি ৯৫% ও এই সুযোগ নিতে পারে।
শেষে একটা বাস্তব উদাহরন দিয়ে শেষ করতে চাই। আপনি এই বাজারে গেলে আপনার সামর্থ্যের মধ্যে সেরা জিনিসটি চান! একজন চাকুরিদাতাও কিন্তু তার সামর্থ্য অনুযায়ী সেরা কর্মীটি চায়। আপনি দক্ষ না হলে এখানে কেউ আপনাকে কিনবে না, কিনলেও ফুটপাতের দামে বিক্রি হতে হবে।
সিদ্ধান্ত আপনার – নিজের সেবার মূল্য কতটা দিতে নির্ধারণ করবেন। ননব্র্যান্ড আর ব্র্যান্ডের জিনিসের দাম কিন্তু অনেক তফাৎ!
নিজেকে ব্র্যান্ড বানান, সময় কিন্তু সীমিত... হুম আর মনে রাখবেন...
ধনীর হার বৃদ্ধির দিক দিয়ে বাংলাদেশ ৩য় । দারিদ্র্যের হার বিবেচনায় অবস্থান ৫ম!বাংলাদেশে ২ কোটি ৪১ লাখ হতদরিদ্র মানুষ আছে। উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বের হারে বাংলাদেশ ২য়।বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার আর বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু বিদেশি ঋণের পরিমাণ এখন ১৭ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। জনগনের প্রত্যাশিত আয়ুকাল এখন ৭২বছরেরও বেশি!!
তবুও বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে আগামী অর্থবছরে বিশ্বের সর্বোচ্চ জিডিপি অর্জন করবে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ।
বিধ্বস্ত নীলিমায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখতে জানে। এটাই বাংলাদেশ। জ্বলে পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়!!
মনোযোগ দিয়ে পড়ুন
Reviewed by Fairy Today
on
January 30, 2019
Rating:
No comments: